ময়েশ্চারাইজার যেকোন ত্বকের যত্নের অন্যতম একটি অংশ। এটি মেয়েদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনই ছেলেদের ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাজারে অনেক রকমের ময়েশ্চারাইজার থাকার কারনে বেশিরভাগ লোকেই কনফিউজড হয়ে যায় কোনটি ব্যবহার করা উচিত।
এখানে আমি আপনাদের জানাবো আপনার ত্বক অনুযায়ী সেরা ময়েশ্চারাইজার কোনটি? কিভাবে ব্যবহার করবেন? ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের উপকারীতা সম্পর্কে। আপনি যদি আপনার ত্বককে আগের যেকোন অবস্থা থেকে আরো ভালো করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।
ময়েশ্চারাইজার মানে কি?
ময়েশ্চারাইজার হলো এমন একটি ত্বকের যত্নের প্রোডাক্ট যেটি ত্বককে হাইড্রেট করে ওভারঅল ত্বককে সুস্থ রাখে যেকোন পরিবেশে। এটি সাধারনত মুখে ও শরীরে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ময়েশ্চারাইজার সাধারনত জল ও তেলের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় এবং সাথে অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান থাকে। যেমনঃ গ্লিসারিন, ভিটামিন-ই, অ্যালোভেরা ও ইত্যাদি। যারা নিয়মিত ত্বকের যত্ন করে তাদের রুটিনের অন্যতম একটি অংশ হল ময়েশ্চারাইজার কারন এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আদ্রতা ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সঠিক ময়েশ্চারাইজার বেচে নেওয়া
ছেলেদের ময়েশ্চারাইজার কিনার সময় কিছু ব্যাপার জানা থাকতে হবে। বিশেষ করে আপনার ত্বকের টাইপ, ত্বকের কোন সমস্যা আছে কিনা, ও যে ময়েশ্চারাইজার কিনবেন সেটার মধ্যে কেন উপাদানগুলো রয়েছে।
সাধারনত পুরুষের ত্বক বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে যেমন- সাধারন, ড্রাই, তেলতেলে, সংবেদনশীল, ও ইত্যাদি। প্রথমত আপনাকে জানতে হবে আপনার ত্বক কোন টাইপের।
ত্বকের টাইট জানার পর অবশ্যাই ত্বকের কোন সমস্যা আছে কিনা তা খেয়াল করতে হবে। আজকাল অনেকরই শরীরের নানানরকম স্কিন রিলেটেড সমস্যা থাকে। এই ধরনের কোন বড় সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এরপর হচ্ছে ময়েশ্চারাইজারের মধ্যে কোন উপাদানগুলো রয়েছে যেগুলো আপনার ত্বক অনুযায়ী কাজ করবে। ত্বকের টাইপ অনুযায়ী কোন উপাদানগুলো ময়েশ্চারাইজারে থাকা উচিত তা নিচে দেওয়া হলোঃ
ড্রাই বা শুকনো ত্বক – ড্রাই স্কিনে সবচেয়ে ভালো কাজ করবে তেল জাতীয় ময়েশ্চারাইজার। এই জন্য অবশ্যই আপনি যে ময়েশ্চারাইজারই কিনবেন দেখে নিবেন এই উপাদানগুলো তার মধ্যে রয়েছে যেমন – নারকেল তেল, জোজোবা তেল, অ্যালোভেরা, ন্যাচেরাল ওয়েল।
অয়লি বা তেলতেলে ত্বক – এইক্ষেত্রে অবশ্যই সেইসব ময়েশ্চারাইজার এভোয়েড করবেন যেগুলোর মধ্যে তেল জাতীয় উপাদান রয়েছে। ময়েশ্চারাইজার কেনার সময় যেটির গায়ে Oil Free বা Anti-Oil লেখা থাকবে সেটিই নিবেন।
সংবেদনশীল ত্বক – এই ত্বকের ক্ষেত্রে কোন ধরনের ময়েশ্চারাইজার না ব্যবহার করাই ভালো। করলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শেই করবেন না হলে উল্টো সমস্যা হতে পারে। মনে রাখবেন সংবেদনশীল ত্বক খুব তারাতাড়ি রিয়েক্ট করে ফেলে।
ময়েশ্চারাইজার কেনার জন্য টিপস
- আপনার ত্বকে কোন টাইপের সেটা নির্ধারন করুন
- যে উপাদানগুলো আপানর ত্বকের জন্য ভালো হবে সেগুলোকেই নিন
- অপ্রয়োজনী উপাদান নেওয়া থেকে বিরত থাকুন
- ইন্টারনেটে ময়েশ্চারাইজারে রিভিউ দেখুন
- একজন বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলোজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন
- বাইরে বেশি বের হলে SPF ( Sun Protection Factor) যুক্ত ময়েশ্চারাইজার কিনতে পারনে
- যেটা ব্যবহার করা সহজ সেটাকে প্রায়োরিটি দিবেন
- আপনার ত্বকের টাইপ অনুযায়ী ডিফারেন্ট ময়েশ্চারাইজার ট্রাই করতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কোনটি আপনার জন্য সেরা
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের নিয়ম
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অনেক সহজ। ব্যবহারের সময় কিছু ব্যাপার মাথায় রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পূর্বে পেস-ওয়াস ব্যবহার করবেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় গোসল করার পর ব্যবহার করলে। কারন এই সময়টাতে শরীর সবচেয়ে বেশি পরিষ্কার থাকে। শীতকালে দিনে দুই বার ব্যবহার করতে পারেন। একবার গোসল করার পর আরেকবার রাতে ঘুমানোর পূর্বে।
ময়েশ্চারাইজার শুধু মুখেই লাগাবেন শরীরে লাগানোর প্রয়োজন নেই। শরীরের অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহারের উপকারীতা
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ৮ টি উপকারিতা দেওয়া হলোঃ
১) ত্বকের সুস্থ ও সুন্দর করে
ময়েশ্চারাইজার মুখের ত্বককে হাইড্রেটেড করতে সাহায্য করে, যেটা ওভারওল মুখের ত্বককে ভালো ও গ্লো করবে।
২) ত্বকের শুষ্কতা ও তেলতেলে ভাব প্রতিরোধ করে
ময়েশ্চারাইজার ত্বকের ভিতর প্রবেশ করে ত্বককে ময়েশ্চারাই করে, যেটি ত্বকের শুষ্কতা ও তেলতেলে ভাব দূর করে।
৩) বাজে পরিবেশে ত্বককে সুরক্ষা দেয়
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে যেকোনো ধরনের পরিবেশের সাথে ত্বক মানিয়ে দিতে পারে যেমন সূর্যের ইউবি রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষা দিয়ে থাকে।
৪) মুখে ব্রন হওয়া রোধ করে
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, যেটি মুখে ব্রন ও মেচতার মতো সমস্যা হওয়া আটকায়।
৫) ত্বককে চুলকানি থেকে মুক্তি দেয়
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে শুষ্ক ত্বকের চুলকানিকে প্রশমিত করতে পারে।
৬) ত্বককে নরম, মসৃণ, ও উজ্জ্বল করে তুলে
ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বকের পরিবর্তন খুব বেশি দেখা যাবে না। অর্থাৎ আপনি যদি নিয়মিত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তাহলে বয়স হলেও ত্বক দেখাবে তারুণ্যের মতো।
৭) ত্বকে সূক্ষ ও বলি রেখা দুর করে
কিছু কিছু ময়েশ্চারাইজারে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও রেটিনালের মতো উপাদান থাকে যেগুলো ত্বকে বলি রেখার মতো দাগ হওয়া রোধ করে।
৮) সহজে গ্রুমিং করা যাবে
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে গ্রুমিং-এর মতো কাজগুলো অনেক কার্যকর হবে৷ শেভিং করার পর ত্বককে নরম ও জ্বালা রোধে বেশ কার্যকর।
দিনে কয়বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত?
ত্বকের দিনে ২ বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে৷ তবে আপনি ত্বকের ধরন ও কোন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করবে দিনে কয়বার ব্যবহার করা উচিত।
SFT যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ধরকার?
আপনি যদি নিয়মিত বাইরে থাকেন তাহলে অবশ্যই SFT যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ধরকার।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে কি ব্রণ হয়?
অতিরিক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের ফলে ত্বকে ব্রণ হতে পারে। এই জন্য অবশ্যই ময়েশ্চারাইজারে থাকা দিকনির্দেশনা মেনে চলা লাগবে।
আরো পড়ুন:
- চুলের যত্নে কি খাওয়া উচিত? (৫টি খাবারের তালিকা)
- চুলের গোড়া শক্ত ও মোটা করার ৫ উপায়
- চুলের যত্ন নেওয়ার ৫ টি ঘরোয়া উপায়
প্রতিটি বয়সের পুরুষের নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। স্কিন টাইপ অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার বেচে নিতে পারলে ত্বকের সুস্থতা নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। তাই আপনার স্কিন কেয়ার রুটিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে ভুল করবেন না।