কিভাবে স্থায়ীভাবে তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করবো?

তৈলাক্ত ত্বক অনেকের জন্য একটি অসহ্যকর সমস্যায় পরিনত হয়ে গেছে। আপনার ত্বকও যদি চকচকে তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে নিশ্চিয় অনেক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেছেন।

যদিওবা তৈলাক্ত ত্বকে তেল উৎপাদন একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমানোর জন্য অনেকগুলো উপায় রয়েছে। 

এখানে তৈলাক্ত ত্বক স্থায়ীভাবে কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায়, চিকিৎসা, ও কিছু টিপস সম্পর্কে জানাবো। 

তৈলাক্ত ত্বকের কারণ কি?

মানুষের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায় সেবামের অধিক উৎপাদনের জন্য যেটি ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে উৎপাদিত প্রাকৃিতিক তেল। নিচে তৈলাক্ত ত্বকের কিছু কারন দেওয়া হলেঃ

জেনেটিক্যালি- তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার অন্যতম কমন কারন হলো বংশগতভাবে সঞ্চারিত হওয়া। যদি আপনার বাবা-মা বা দাদা-দাদি কারোর ত্বক তৈলাক্ত থাকে তাহলে সেটি আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হরমোনের পরিবর্তন- হরমোনের ওটানামাও তৈলাক্ত তেল হওয়ার অন্যতম কারন। বয়ঃসন্ধিকাল বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

লাইফস্টাইল ও ডায়েট- আজকাল এটিই হলো তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার অন্যতম প্রধান কারন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার, ধূমপান, ও অত্যাধিক অ্যালকোহল সেবনের কারনে এটি হতে পারে।

ত্বকের যত্নের প্রোডাক্ট ও ভারী মেকআপ- মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। মেকআপ বা স্কিন কেয়ার পন্যগুলোতে ভারী চার্বিজাতীয় পন্য ত্বকে আটকে যায় যা থেকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে থাকে।

পরিবেশেগত- আদ্রতা, তাপ, ও দূষনও তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার জন্য দায়ী। 

এইগুলোও ছাড়াও তৈলাক্ত ত্বক হওয়ার আরো অনেক কারন রয়েছে। সেগুলো জানার জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে। একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সাথে পরামর্শ করে তৈলাক্ত ত্বকের কারন ও প্রতিকার জানতে চাওয়া সবচেয়ে উত্তম।

তৈলাক্ত ত্বক ফর্সা করার ঘরোয়া প্রতিকার

অনেকগুলো ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে যাবে এবং সামগ্রিক ভাবে ত্বক স্বাস্থ্যউজ্জ্বল হবে। যারা ত্বকের যত্নে প্রাকৃতিক ও কম বাজেটের ঘরোয়া পদ্ধতি খুঁজে থাকেন তাদের কাছে এগুলো বেশ কার্যকর হবে। নিচে তৌলাক্ত ত্বক দূর করার জন্য কয়েকটি প্রতিকার দেওয়া হলোঃ

তেল-মুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টের ব্যবহার

আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তবে আবশ্যই সেই সব পন্য ব্যবহার করা উচিত যেগুলোয় তেলের উপাদান কম রয়েছে।

এন্টি-ওয়েল পন্য ব্যবহারে ত্বকের খাদগুলো পূরন হবে যেটি অতিরিক্ত তেল উৎপাদন কম করে। সবমসময় ভারী চর্বিযুক্ত পন্য না ব্যবহার করে পানি বা তেল-মুক্ত ব্যবহার করুন।

ফেস মাস্ক হিসেবে প্রাকৃিতিক পন্যগুলো ব্যবহার

অনেক প্রাকৃতিক উপাদানে অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালের মত প্রোপার্টিজ রয়েছে যেগুলো তৈলাক্ততা কমাতে ও ত্বককে স্বাস্থ্যউজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করবে। কয়েকটি কার্যকরীর প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে – ঘৃতকুমারী, লেবুর রস, মধু, এবং গ্রীন টি।

ফেস মাস্ক তৈরি করার জন্য এই যেকোনো একটি উপাদানের সাথে পানি বা দই মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের মৃত কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেবে। 

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা

ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দৃর করার জন্য ত্বকের হাইড্রেশন অনেক জরুরি। তাই বয়স অনুযায়ী পানি পান করা উচিত। এছাড়াও কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন- ফল,শাকসবজি, চর্বিহীন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ত্বকের সুস্থ্যতায় বেশ কার্যকর হতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টিপস 

সান প্রোটেকশন ব্যবহার করা- সূর্যের ক্ষতিকর ইউবি রশ্নি থেকে মুক্তি পেতে এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত সূর্যের আলো ত্বকের ডেমেজ ও তেলতেলে ভাব দূর করে। এই জন্য SFT ৩০ পর্যন্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো কাজে দিবে।

ব্রণ বা পিম্পল না গলানো- যদিওবা এটি সাময়িকভাবে ব্রনের দাগ দূর করে দেয় কিন্তু এটি ভালোর চেয়ে ক্ষতি বেশি করে, বিশেষ করে যদি আপনার ত্বক অয়েলি হয়। এটি করার ফলে মুখে জ্বালা হয় তাই এগুলো যেভাবে আছে সেভাবে থাকতে দেওয়াটাই ভালো।

অতিরিক্ত পরিমাণ না ধোয়া- একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ত্বকের যত্নের রুটিনে অবশ্যই ভালে করে ত্বককে ধোয়া থাকতে হয়৷ তবে এটি অতিরিক্ত করার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল বের হয়ে যেতে পারে এবং আরো বেশি তৈলাক্ততা সৃষ্টি করতে পারে।

তেল-মুক্ত স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার- আগেই বলেছি তেল-মুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকের অতিরিক্ত তেল উৎপাদন কমাতে সাহায্য করে। যদি আপনার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কম হয়ে যায় তরপরও তেল-যুক্ত প্রোডাক্ট না ব্যবহার করাই ভালো। 

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন প্যাক ভালো?

অ্যালোভেরা ও হলুদের ফেস প্যাক তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ ভালো। এটি করার জন্য ১ চামিচ পরিমানে অ্যালোভেরার মধ্যে আধা চামিচ হলুদের গুড়ো মিশেয়ে নিন। এটি পুরো মুখে ২০ মিনিটের মতো রেখে ধুয়ে পেলেন। এতে ত্বকের তেল-তেলে ভাব অনেকটা দূর করবে।

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কোন ফেসওয়াস ভালো?

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য “পন্ডস পেস ওয়াস পিওর ডিটক্স” সবচেয়ে ভালো হবে। ছেলেদের তৈলাক্ত ত্বকের জন্য “মুচস্ট্যাক মেনস ওশেন ফেস ওয়াস” ব্যবহার করতে পারেন।

যেই ফেস ওয়াশই   কিনেন সেটি যেন তেল-মুক্ত বা এন্টি অয়েলি হয়। অবশ্যই যেকোনো সংবেদনশীল ত্বকে যেকোন পেস ওয়াশ ব্যবহারের পূর্বে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।

তৈলাক্ত ত্বকে ফেসওয়াশের পর কি ব্যবহার করা উচিত?

তৈলাক্ত ত্বকে ফেসওয়াস ব্যবহারের পর একটি হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। 

আরো পড়ুন

তৈলাক্ত ত্বক কালো দেখায় কেনো?

তৈলাক্ত ত্বক মানেই হচ্ছে ময়েশ্চারাইজহীন ত্বক। এই ময়েশ্চারাইহীনতার ফলে আরো বেশি তেল উৎপাদন হয় যেটি বেশি হয়ে গেলে ত্বককে কালো দেখায়।

আগেই বলেছে তৈলাক্ত ত্বক একটি হতাশাজনক সমস্যা হতে পারে। এটি স্থায়ীভাবে কম করার জন্য অয়েল ফ্রি স্কিন কেয়ার পন্য ব্যবহার করা উচিত। তবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার।

এটা জেনে রাখা দরকার যে কোন পদ্ধতি কারো জন্য সমানভাবে কাজ করবে না এটি জানার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ কিছু পরিক্ষা করা লাগতে পারে। ত্বকের সঠিক যত্ন ও লাইফস্টাইলে একটু পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনিও স্থায়ীভাবে  কম তৈলাক্ত ত্বক পেতে পারেন।

Leave a Comment