কিভাবে দ্রুত ওজন কমানো যায়? (ব্যায়াম ও উপায়)

কিভাবে দ্রুত ওজন কমানো যায়? আজকালকার ফাস্টফুড ও বাজে  লাইফস্টাইল এর কারণে শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া কমন ব্যাপার হয়ে গেছে। আবার অনেকেই ছোটবেলা থেকেই একটু মোটা শরীরের হয়ে থাকেন। 

আপনিও কি এই সমস্যায় ভুগছেন?

আর জানতে চাচ্ছেন শরীরের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়।

তাহলে আমাদের এই গাইডটি আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

কিভাবে শরীরের দ্রুত ওজন কমানো যায়?

পুষ্টিবিদ Aysha Siddika-এর মতে দ্রুত ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত হাঁটাচলা বা শরীরচর্চা করা, ফ্যাট যুক্ত খাবার পরিহার করা, দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম যাওয়া, ও বাড়তি স্ট্রেস না নেওয়া হতে পারে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।  

এখন নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন কোন কাজগুলো করলে আপনি দ্রুত আপনার শরীরের ওজন কমাতে পারবেন। 

নিচে এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত দেওয়া হল।

দ্রুত ওজন কমানোর ৫ টি উপায়

১) পানি পান করা 

পানি পান করা

পরিমাণমতো পানি পান করা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় গুলোর মধ্যে একটি। তবে ওজন কমানোর জন্য আপনি প্রতিদিন কতটুকু পরিমান পানি খাওয়া লাগবে সেটি আপনার বর্তমান ওজনের উপর নির্ভর করবে। 

সবসময় খাওয়ার আগে পানি পান করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনি যে খাবারটি খেয়েছে সেটি সহজে হজম হবে। 

২) নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা

নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা

ওজন কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী বিজ্ঞানসম্মত উপায় হল ব্যায়াম করা। প্রতিদিন আপনার বাড়িতে কিছু বিশেষ ওয়ার্ক আউট করে নিলে আপনার শরীরকে আরো হালকা মনে হবে। 

৩) প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া

স্বাস্থ্যকর খাবার ওজন কমানো বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার অনেক বেশি পরিমাণে খেতে হয় অন্যান্য খাবারের তুলনায়। ওজন কমানোর জন্য যে স্বাস্থ্যকর খাবার গুলো খেতে পারেনঃ

  • তরতাজা শাক ও সবজি
  • ডিম
  • বাদাম
  • মাছ
  • ডাল
  • পনির
  • সিদ্ধ আলু
  • ও অন্যান্য উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার সমূহ।

৪) মানসিক চাপ বা স্ট্রেস নেওয়া থেকে বিরত থাকা

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস নেওয়া থেকে বিরত থাকা

অতিরিক্ত পরিমাণের মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা ওজন বাড়ানোর অন্যতম কারণ। এই ধরনের অবস্থায় শরীরে কোলেস্টেরল হরমোনের  উৎপাদন বৃদ্ধি করে। 

আর কোলেস্টেরল শরীরের মেদ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। দিন যত যেতে থাকে এই দুশ্চিন্তা গুলো আরো বেশি হতে থাকে, যার ফলে ওজন আরো দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই যখনই আপনি ওজন কমানোর চেষ্টা করবেন তখন একেবারেই ট্রেস নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।

৫) চিনিগুড়া চালের ভাত খাওয়া

চিনিগুড়া চালের ভাত খাওয়া

ওজন কমানোর সময় অবশ্যক হয় কম ক্যালরি যুক্ত খাবার। যেহেতু একজন বাঙালি হিসেবে আপনি কখনোই ভাত খাওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন না, সেহেতু চিনিগুড়া চালের ভাত হতে পারে সমাধান।

কারণ এতে রয়েছে উচ্চ ফাইবার যা ওজন কমানোর জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনার খাবারটাও হবে সাথে কম ক্যালোরি গ্রহণ করা হবে। 

ওজন কমানোর জন্য ৫ টি সহজ ব্যায়াম

১) সাইকেলিং

আপনি যদি আপনার ওজন খুব দ্রুত কমাতে চেষ্টা করেন তাহলে অবশ্যই সাইকেলিং করে দেখতে পারেন। ওজন কমানোর জন্য দৈনিক ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার সাইকেলিং করা যেতে পারে। এতে করে শরীরের ওজন কমার পাশাপাশি শরীরের  নিচের অংশ বা ভুঁড়িও কমবে। 

২) সাঁতার 

সাঁতার কাটা ওজন কমানোর জন্য অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই যদি সম্ভব হয় তাহলে সাঁতার কাটতে পারেন। ওজন কমানোর রুটিনের মধ্যে অবশ্যই থাকা উচিত। এক মাসে ১০ থেকে ১৫ বার সাঁতার কাটলে আপনার ওজন কমা আরও দ্রুত হবে।

৩) জাম্প রোপ বা দড়ি লাফানো

দড়ি লাফানোকে বলা হয় ক্যালরি বার্ন করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। প্রতি 30 মিনিট দড়ি লাফানোর ফলে 300 ক্যালরি পর্যন্ত ঝরে যায়। যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা দৌড়াতে পারেন না তাদের জন্য জাম্প রোপ বা দড়ি লাফানো হতে পারে কার্যকরী একটি ব্যায়াম।

৪) কিক বক্সিং

কিক বক্সিং হলো অন্যতম একটি সহজ ব্যায়াম যেটি করে আপনি ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। কিকবক্সিং এর একাধিক উপকারিতা রয়েছে তবে বিশেষভাবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে। ভালো ফলাফল পেতে প্রতিদিন ৩০মিনিট করে কিক বক্সিং করুন।

৫) সিঁড়ি দিয়ে উঠা

অনেকের বাসাবাড়িতে সিঁড়ি থাকলেও তা চড়তে কষ্টসাধ্য হওয়ায়  ব্যবহার করে না। আপনি যখনই ওজন কমানোর চেষ্টা করতেছেন তখন অবশ্যই সবসময় সিঁড়ি ব্যবহার করা উচিত। যদি কোন দরকারও না থাকে তারপরও দিনে ২থেকে ৩ বার সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন।  

আপনি যদি ব্যায়াম ছাড়া ওজন কমাতে চান তাহলে এটি পড়ুন – ব্যায়াম ছাড়া কিভাবে ওজন কমানো যায়?

দ্রুত ওজন কমানো নিয়ে কিছু কমন প্রশ্ন ও উত্তর 

কিভাবে ৩ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানো যায়?

মাত্র ৩ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব না। ন্যাচারাল পদ্ধতি-তে এত দ্রুত কখনো ওজন কমানো সম্ভব নয়। যদি এই রকম করা হয় তাহলে শরীরে মারাত্মক রকমের ক্ষতি হতে পারে।

কি খেলে মোটা কমবে?

যেসব খাবার খেলে মোটা কমবে – চিনিগুড়া চালের ভাত, শাক, সবজি, ফল। যেসব খাবারে অতিরিক্ত সুগার রয়েছে সেইসব খাবার কোনোভাবেই খাওয়া যাবেনা। কারণ সেখানে অনেক বেশি পরিমাণে ক্যালরি থাকে, যেটা চর্বি বাড়িয়ে দেয়।

ভাত না খেলে কি ওজন কমে?

আইসল্যান্ডের একজন পুষ্টিবিদ Adda Bjarnadottir-এর মতে, নরমাল সাদা ভাত খেলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়িাটি আস্তে হয়। তবে একজন বাঙালি হিসেবে ভাত না খেয়ে থাকতে পারবেন না। যদি ভাত খাওয়া বন্ধ না করে দিয়ে অল্প করে খাওয়া যায় তাহলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে  কোনরকম সমস্যা হবে না। 
 
আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট জরুরী। আর ভাত ছাড়া এমন অনেক কম খাবার আমরা খাই যেগুলোতে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। তাই একেবারে ভাত খাওয়া বন্ধ না করে দিয়ে অল্প করে খেলে ওজন কমাতে কোন সমস্যা হবে না।

সর্তকতা

আপনি যদি দ্রুত ওজন কমাতে চান তাহলে একটু বাড়তি চেষ্টা করতে হবে। একটি স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট, নিয়মিত শরীরচর্চা করলেই ওজন কমা শুরু করবে। 

আজকাল দ্রুত ওজন কমানোর নামে ইউটিউবে বা অন্য অনেক জায়গায় ক্লিকবেট টাইটেল ও থামনেল নিয়ে থাকে। যেগুলো দেখতে আসলে অনেক আকর্ষণীয় হলেও সত্যিকার অর্থে এগুলো মোটেও সম্ভব নয়। 

সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে ওজন কমানোর জন্য লেগে থাকুন। খুব দ্রুতই আপনি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন। মনে রাখবেন একজন সুস্থ ব্যক্তি ক্ষেত্রে প্রতিমাসে ৪ থেকে ৫ কেজি ওজন কমানো যেতে পারে।

Leave a Comment