চুলের যত্ন নেওয়ার সময় বিভিন্ন প্রোডাক্ট বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় যেগুলোর অতি ব্যবহারের ফলে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। তাই অনেকের কাছে চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায় বেশি পছন্দ করে। কারন এগুলো ব্যবহারের কোন সাইড ইফেক্ট নাই এবং খুব সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যায়।
চুলের যত্নে ১০ টি কার্যকরী ঘরোয়া উপাদান
উপাদান | কারণ |
---|---|
নারকেল তেল | চুলকে ময়েশ্চারাইজিং ও মজবুত করার জন্য |
অ্যালোভেরা | চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়া রোধে ও চুলকানি মুক্ত রাখার জন্য |
মধু | চুলের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা বৃদ্ধির জন্য |
লেবুর রশ | খুশকি নিরাময়ের জন্য |
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার | মাথার ত্বকের PH মাত্রা ঠিক রাখার জন্য |
অ্যাভোকাডো | চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি ও ঝড়ে যাওয়া রোধ করার জন্য |
ডিমের কুসুম | চুলের কন্ডিশনিং ও মজবুত করার জন্য |
অলিভ অয়েল | নতুন চুল গজানোর জন্য |
কলা | চুলকে আরো ঘন করার জন্য |
চা গাছের তেল | তৈলাক্ত মাথার ত্বকের সমস্যায় ও খুশকি দূর করার জন্য |
চুলকে উজ্জ্বল ও মোটা করতে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জানার আগে কেন এইসব ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করবেন অন্য হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্ট বাদ দিয়ে সেটা জানা দরকার।
চুলের যত্নে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার উপকারিতা
নিঃসন্দেহে ঘরোয়া উপায়ের অনেক বেশি উপকারি কারন এগুলো কম বেশি প্রায় সকলের ক্ষেত্রে কাজ করে। নিচে চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করার কিছু উপকারীতা দেওয়া হলঃ
কমদাম ও সস্তা- অনেকগুলো উপাদান যেগুলো খুব সহজেই আমাদের ঘরেই পাওয়া যায়। যদি কিনার প্রযোজন হয় সেটাও খুবই অল্প দাম। যেমনঃ নারকেল তেল ও মধু যেগুলো প্রায় সকলের কাছেই রয়েছে।
প্রাকৃতিক ও নিরাপদ- ঘরোয়া উপাদানগুলো সমনপূর্ন প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়ে থাকে যেগুলে চুলের গোড়া মজবুত করতে অনেক সাহায্য করে সাথে চুলের ড্যামেজর মত সমস্যার সামাধান দিয়ে থাকে।
নিজের মত করে তৈরি করা যায় – অনেক সময় চুলের বিভিন্ন সমস্যায় আলাদা অনেকগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করা যেতে পারে। চুলের কোন নির্দিষ্ট সমস্যায় ভুগলে এটি অত্যান্ত কার্যকরী।
তৈরি করা অনেক সহজ– যদিওবা বেশিরভাগ সময় এইসব ঘরোয়া উপাদানকে কিছু করার প্রয়োজন হয় না সরাসরি ব্যবহার করা যায়৷ কিন্তু কিছু ঘরোয়া উপায় তৈরি করার সময় কোন সমস্যায় পড়তে হয় না কারন একটাই খুব সহজেই যে কেউই তৈরি করতে পারে।
চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়সমূহ ব্যবহার করার টিপস
প্যাচ টেস্ট করা – প্যাচ টেস্ট হচ্ছে একটি পরীক্ষা যেখানে কোন উপাদানে আপনার ত্বকের এলার্জি রযেছে সেটা নির্ধারন করা হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই জানি না কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। চুলের যত্নে যেকোন ধরনের ঘরোয়া উপায় প্রযোগের আগে এই টেস্টের মাধ্যমে জেনে নেওয়া উচিত।
সঠিক পরিমান ব্যবহার করা – কি পরিমাণ উপাদান ব্যবহার করবেন এবং কতক্ষণ ব্যবহার করবেন সেটা সম্পর্কে জেনে নেওয়া সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আপনার মাথার সাইজ ও চুল অনুযায়ী আপনি নিজেও নিজের জন্য সঠিক পরিমাণ নির্ধারন করতে পারেন। তাই কোন ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার পর কাজ না করলে সেটার পরিমান কম বা বেশি করে আরো আরেকবার দেখতে পারেন।
যত্রতত্র জায়গায় না রাখা – কিছু কিছু উপাদা রয়েছে যেগুলোকে সঠিক তাপমাত্রায় রাখতে হয় না হলে সেটার তার্যকারীতা নষ্ট হয়ে যায়। যেমন – নারিকেল তেল ও মধুর মতো উপাদানগুলো। নারকেল তেলকে ব্যবহার করার পূর্বে ঠান্ডা, শুষ্ক, ও বাতাসহীন জায়গায় রাখবেন। এর ফলে এটি চুলের যত্নে কার্যত ভূমিকা পালন করতে পারবে।
বেশি ব্যবহার করা যাবে না – চুলের যত্নে ঘরোয়া উপাদানগুলোর ঘন ঘন ব্যবহার সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে মাথায় যদি চুলকানি বা কাটা থাকে তাহলে কিছু কিছু উপাদান না ব্যবহার করা ভালো। যেমন – লেবুর রশ।
চুলের যত্ন নেওয়ার ৫ টি ঘরোয়া উপায়
১) চুলের যত্নে নারকেল তেল

নারকেল তেল হচ্ছে চুলের যত্নে অন্যতম উপাদান কারন এটি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। চুলকে গেড়া থেকে মজবুত করতে ও ময়েশ্চারের জন্য দারুন কাজ করে। চুলের যত্নে নারকেল তেলের ব্যবহার অনেক সহজ।
অল্প পরিমানে তেল নিয়ে মাথার উপর হালকা করে মাসাজ করে ৩০ মিনিট ধরে তেলযুক্ত করে রেখে দিবেন। এরপর ওয়াশ করে নিন সাথে একটি মাইল্ড স্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
২) চুলের যত্নে অ্যালোভেরা

চুলের যত্নে আরেকটি কমন ও অনেক বেশি জনপ্রিয় উপাদান হলো অ্যালোভেরা। এটিকেও বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো – অল্প পরিমাণে অ্যালোভেরার জেলের সাথে পানি মিশিয়ে একটি হালকা পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টটি মাথায় ১৫ মিনিট পর্যন্ত রাখতে পারেন, এরপর একটি মাইল্ড স্যাম্পু দিয়ে দুয়ে রিতে পারেন।
৩) চুলের যত্নে মধু

চুলকে সপ্ট ও সাইন করার জন্য মধুর ব্যবহার হয়ে আসছে। চুলের যত্নে যেসকল প্রোডাক্ট রয়েছে সেগুলোর মধ্যে মধুর ব্যবহার অনেক বেশি দেখা যায়।
চুলের যত্নে মধুর ব্যবহারের সঠিক প্রক্রিয়া – মধুর সাথে পানি (পানির বদলে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশালে বেশি ভালো হবে) পাতলা করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রনটি চুলের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট রাখুন এরপর একটি মাইল্ড স্যাম্পু দিয়ে দুয়ে নিন।
৪) চুলের যত্নে লেবুর রশ

লেবুর রশ চুলের জন্য বহুমুখী ভূমিকা পালন করে। কারন লেবুতে এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিব্যাকটেরিয়ার মতো কিছু বিশেষ উপাদান রয়েছে যেগুলো চুলকে ড্যামেজ হতে বাধা দেয়।
লেবুর রশকে চুলের যত্নে ব্যবহার করার জন্য সঠিক প্রক্রিয়া হলো – ১ টি লেবুর রশের সাথে একটু পানি মিশিয়ে মিশ্রনটি একেবারে চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন ১৫ মিনিটের জন্য। তারপরর অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে দুযে নিবেন।
৫) চুলের যত্নে অ্যাপেল সিডির ভিনেগার

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার একটি কমন উপাদান চুলের যত্নের বিভিন্ন উপায়ে। ড্যানড্রপকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার বেশ কার্যকর। সবচেয়ে সহজে এটি ব্যবহার করার জন্য পানির সাথে মিশিয়ে ১৫ মিনিটের জন্য মাথায রেখে তারপর পানি দিয়ে দুয়ে নিলেই হবে।
এখানে বলা প্রত্যেকটা ঘরোয়া উপাদা চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভালো ফলাফলের জন্য অন্য কোন উপাদান মিশালে আরো ভালো হয় সেটি পানিও হতে পারে। পানি ব্যবহার করার ফলে উপাদনটি পাতলা হয়ে যায় যার ফলে ওভারইউজ হ্রাস পায়।
চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
চুলের যত্নে ঘরোয়া প্রতিকারগুলো কিভাবে কাজ করে?
চুলের যত্ন নেওয়ার সময় ঘরোয়া প্রতিকার অনেকই করে থাকে। এগুলো খুব ভালো কাজ করে কারন বেশিরভাগ সময় উপাদানগুলো প্রাকৃতিক হয়ে থাকে। এগুলো চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় কাজ করে। চুলের যে পুষ্টিমান অভাব রযেছে সেটি পূরন করতে পারে।
চুলের যত্নে ঘরোয়া উপাদান কি নিরাপদ?
এটি সঠিকভাবে বলা যায় না। তবে পেচ টেস্ট করার পর বুঝতে পারা যায় চুলে কোন উপাদান ব্যবহার করা যাবে আর কোনটি ব্যবহার করা যাবে না। তবে ওভারওল বলতে খেলে চুলের যত্নে ঘরোয়া উপাদানসমূহ একেবারে নিরাপদ।
সতর্কতা
নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন চুলের যত্ন ঘরোয়া উপায়গুলো সম্পর্কে যেগুলো ব্যবহারের ফলে চুল হবে আরো সুন্দর। এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো নিজের মতো করে প্যাক হিসেবে ব্যবহার করলে চুলের জন্য বেশ ভালো হবে। সবগুলো ব্যবহার করার ফলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার জন্য কোন ঘরোয়া উপাদানটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর। চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায় ফলো করার ফলে কমার্সিয়াল কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট দেখেও মুক্তি পাবেন সেগুলোর রয়েছে একগাদা সাইড এপেক্ট।